Showing posts with label প্রাচীন যুগ. Show all posts
Showing posts with label প্রাচীন যুগ. Show all posts

প্রাচীন বাংলার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস: শেষ অংশ

প্রাচীন বাংলার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস: শেষ অংশ

শিল্পকলা ও স্থাপত্য-ভাস্কর্য

বাংলাদেশের নানাস্থানে প্রাচীন বাংলার স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রশিল্পের বহু নির্দশন পাওয়া গেছে। নানাবিধ কারণে প্রাচীন বাংলার শিল্পকলা ধ্বংস হয়ে গেছে। তবুও নিঃসন্দেহে বলা যায়, প্রাচীন যুগে বাংলার শিল্পকলা খুবই উন্নত ছিল।

স্থাপত্য : প্রাচীন বাংলার স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন অতি সামান্যই আবিষ্কৃত হয়েছে। চীন দেশের ভ্রমণকারী ফা-হিয়েন ও হিউয়েন-সাং- এর বিবরণী ও প্রাচীন শিলালিপি থেকে প্রাচীন যুগে বাংলার কারুকার্যময় বহু হর্ম্য, (চূড়া, শিখা) মন্দির, স্তূপ ও বিহারের কিছু পরিচয় পাওয়া যায়।

ভারত উপ-মহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপত্যের নির্দশন হলো স্তূপ। বৈদিক যুগে দেহাবশেষ পুঁতে রাখার জন্য শ্মশানের উপর মাটির স্তূপ রক্ষা করার জন্য এ স্থাপত্য পদ্ধতিকে গ্রহণ করা হয়। বৌদ্ধধর্ম যেখানেই প্রসার লাভ করেছে, সেখানেই ছোট-বড় অসংখ্য স্তূপ নির্মিত হয়েছে। প্রাচীন বাংলায় কিছু বৌদ্ধ ও জৈন স্তূপ নির্মিত হয়েছিল। ঢাকা জেলার আশরাফপুর গ্রামে রাজা দেব খড়গের ব্রোঞ্জ বা অষ্টধাতু নির্মিত একটি স্তূপ পাওয়া গেছে। এটিই সম্ভবত বাংলার সবচেয়ে প্রাচীন স্তূপের নির্দশন। রাজশাহীর পাহাড়পুর এবং চট্টগ্রামের ঝেওয়ারিতে আরও দুটি ব্রোঞ্জের তৈরি স্তূপ পাওয়া গেছে। এছাড়া, রাজশাহীর পাহাড়পুর এবং বাঁকুড়ার বহুলাড়ায় বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইটের তৈরি স্তূপ পাওয়া গেছে।

অতি প্রাচীনকাল হতে বাংলায় বৌদ্ধ ও জৈন ভিক্ষুরা বিহার ও সংঘরাম তৈরি করে স্ব স্ব ধর্ম প্রচার করতেন। কিন্তু একে স্থাপত্য কর্ম বলা চলে না। কারণ, ইট-পাথরের কাঠামোর উপর বাঁশ ও কাঠ দিয়ে এগুলো তৈরি হতো। কালক্রমে বৌদ্ধ ও জৈন সংঘে যখন প্রচারকের সংখ্যা বাড়তে লাগল তখন হতেই ইটের তৈরি বিহার প্রস্তুত শুরু হলো। পাল যুগে এসেই বিহারের রূপের পরিবর্তন হলো। এসব বিহারের কোনো কোনটি বেশ বড় এবং কারুকার্যময় ছিল। স্তূপের মত এগুলোও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে। রাজশাহীর পাহাড়পুরে যে বিশাল বৌদ্ধ বিহার আবিষ্কৃত হয়েছে তা প্রাচীন বাংলার স্থাপত্য শিল্পের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। এ পর্যন্ত ভারত উপমহাদেশে যত বিহার আবিষ্কৃত হয়েছে তারমধ্যে এ বিহারটি সবচেয়ে বড়। জানা যায়, অষ্টম শতকে ধর্মপাল এখানে প্রকাণ্ড বিহারটি নির্মাণ করেন। ‘সোমপুর বিহার’ নামে এটি সমগ্র ভারতবর্ষে ও ভারতবর্ষের বাইরে খ্যাতি অর্জন করে। সোমপুর বিহার ব্যতীত ধর্মপাল বিক্রমশীল বিহার ও ওদন্তপুর বিহার নামে আরও দুটি বিহার নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়া পাল আমলে তৈরি ছোট-বড় আরও কয়েকটি বিহারে নাম পাওয়া যায়। যেমন-মালদহের ‘জগদুল বিহার’, ‘দেবীকোট বিহার’, চট্টগ্রামের ‘পণ্ডিত বিহার’, ত্রিপুরার ‘কনকস্তূপ বিহার’ প্রভৃতি। কয়েক বছর পূর্বে কুমিল-র ময়নামতিতে কয়েকটি বিহারের সন্ধান পাওয়া গেছে। ইহা ‘শালবল বিহার’ নামে পরিচিত।া কেহ কেহ মনে করেন যে, পাহাড়পুরের বিহার ও মন্দির অপেক্ষাও বড় মন্দির ও বিহার এখানে ছিল।

প্রাচীন বাংলার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস: প্রথম অংশ

প্রাচীন বাংলার সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করাই তার স্বভাব। এভাবে বাস করতে হলে চাই একে অন্যের সাথে সহযোগিতা। এ কারণেই মানুষের প্রয়োজন পড়ে বিভিন্ন সামাজিক অর্থনেতিক ও রাজনৈতিক এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। জীবন বাঁচাতে তিনটি জিনিসের প্রথম প্রয়োজন- খাদ্য, বস্ত্র এবং বাসস্থান। এরপরই মানুষ জীবনকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে মনোযোগ দেয় শিক্ষা, বিজ্ঞান, শিল্পকলা, আইন প্রভৃতির উন্নয়নে। সমাজ জীবন বিকাশে মানুষের এ সমস্ত কাজকর্মের একত্রিত রূপই হচ্ছে তার সংস্কৃতি। আর্যদের আগমনের পূর্বে বাংলার প্রাচীন মানুষেরা একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন গড়ে তুলেছিল। বাংলার সমাজ-সংস্কৃতির এটাই সবচেয়ে প্রাচীন রূপ। পণ্ডিতদের মতে, এদের ভাষার নাম ছিল ‘অষ্ট্রিক’। জাতি হিসেবে এদের বলা হতো নিষাদ। এরপর বাংলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাথে মিশে যায় ‘আলপাইন’ নামে এক জাতি। আর্যরা এদেশে আসার পূর্বে এরা মিলেমিশে বাংলার সংস্কৃতি গড়ে তোলে। বাঙালির জন প্রকৃতিতে বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর ধারা এসে মিলিত হয়েছে। ফলে তাদের ‘সংকর-জন’ হিসেবে পরিচিত করেছে। বহু বছর বিচিত্র আদান-প্রদান ও মিশ্রণের ফলে বাঙালির একটি নিজস্ব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বৈশিষ্ট্য দাঁড়িয়েছে। ফলে অধিকাংশ বাঙালির মাথা গোল আকৃতির, চুল কালো, চোখের মনি পাতলা হতে ঘন কালো, নাকের আকৃতি মোটামুটি মধ্যম, গায়ের রং সাধারণত শ্যামলা, মুখমণ্ডলের গঠন মধ্যম আকৃতির অর্থাৎ গোল বা লম্বা নয়। এ মধ্যম আকৃতির দেহ লক্ষণই বাঙালির বৈশিষ্ট্য।

প্রাচীন বাংলার সমাজ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি

প্রাচীন বাংলার সামাজিক জীবন

মৌর্য শাসনের পূর্বে ব্যাপক অর্থে বাংলার অধিবাসীদের মধ্যে রাজনৈতিক পরিচয় গড়ে ওঠেনি। এ সময়ে সমাজ বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত ছিল। একে বলা হতো কৌম সমাজ। আর্যদের পূর্বে কিছু কিছু ধর্মচিন্তা পরবর্তী সময়ে এদেশের হিন্দু ধর্মে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলোর মধ্যে উলে- যোগ্য হলো-কর্মফল, জন্মান্তরবাদ, যোগ সাধনা ইত্যাদি। এ যুগের অনেক সামাজিক প্রথা ও আচার-আচরণের প্রভাব পরবর্তী সময়ে হিন্দু সমাজে লক্ষ করা যায়। যেমন- অতিথিদের পান-সুপারি খেতে দেয়া, শীবের গীত গাওয়া, বিয়েতে গায়ে হলুদ দেয়া, ধূতি-শাড়ি পরা এবং মেয়েদের কপালে সিঁদুর দেয়া ইত্যাদি।

আর্য সমাজের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অঙ্গ ছিল জাতিভেদ প্রথা। তারা দীর্ঘদিন ধরে এদেশে বসবাস করার ফলে বাংলায়ও এ ব্যবস্থা চালু হয়। প্রাচীনকালে বাংলায় ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র- এ চার প্রকার বর্ণ ছিল। পরবর্তী সময়ে আরও নানা প্রকার সঙ্কর অর্থাৎ মিশ্র জাতির সৃষ্টি হয়। সমাজে প্রত্যেক জাতিরই নির্দিষ্ট পেশা ছিল। অধ্যয়ন, অধ্যাপনা ও পূজা পার্বন করা- এগুলো ছিল ব্রাহ্মণদের নির্দিষ্ট কর্ম। তারা সমাজে সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা লাভ করতেন। ক্ষত্রিয়দের পেশা ছিল যুদ্ধ করা। ব্যবসা-বাণিজ্য করা ছিল বৈশ্যদের কাজ। সবচেয়ে নিচু শ্রেণির শূদ্ররা সাধারণত কৃষিকাজ, মাছ শিকার ও অন্যান্য ছোটখাটো কাজ করত। ব্রাহ্মণ ছাড়া বাকী সব বর্ণের মানুষ একে অন্যের সাথে মেলামেশা করত। সাধারণত এক জাতির মধ্যেই বিবাহ হতো, তবে উচ্চ শ্রেণির বর ও নিম্ন শ্রেণির কন্যার মধ্যে বিবাহও চালু ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এসব ব্যাপারে কঠোর নিয়ম চালু হয়।

প্রাচীন বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস (খ্রিঃপূর্ব ৩২৬-১২০৪ খ্রিঃ): বাকি অংশ

প্রাচীন বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস (খ্রিঃপূর্ব ৩২৬-১২০৪ খ্রিঃ): শেষ অংশ

দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার স্বাধীন রাজ্য

পাল যুগের বেশির ভাগ সময়েই দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা স্বাধীন ছিল। তখন এ অঞ্চলটি ছিল বঙ্গ জনপদের অন্তর্ভুক্ত। অষ্টম শতকের মাঝামাঝি থেকে বেশ কিছু রাজবংশের রাজারা কখনো পাল রাজাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে স্বাধীনভাবে তাদের এলাকা শাসন করতেন, আবার কখনো পাল রাজাদের অধীনতা স্বীকার করে চলতেন।

 

খড়গ বংশ :

সপ্তম শতকের দ্বিতীয়ার্ধে মগধ ও গৌড়ে পরবর্তী গুপ্তবংশীয় রাজাগণ প্রভুত্ব স্থাপন করেন। এ সময় খড়গ বংশের রাজারা দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় একটি স্বাধীন রাজ্যের সৃষ্টি করেন। তাঁদের রাজধানীর নাম ছিল কর্মান্ত বাসক। কুমিল- জেলার বড় কামতার প্রাচীন নামই সম্ভবত এ কর্মান্ত বাসক। খড়গদের অধিকার ত্রিপুরা ও নোয়াখালী অঞ্চলের উপর বিস্তৃত ছিল।

 

দেববংশ :

খড়গ বংশের শাসনের পর একই অঞ্চলে অষ্টম শতকের শুরুতে দেব বংশের উত্থান ঘটে। এ বংশের চারজন রাজার নাম পাওয়া যায়। এঁরা হলেন শ্রীশান্তিদেব, শ্রীবীরদেব, শ্রীআনন্দদেব ও শ্রীভবদেব। দেব রাজারা নিজেদের খুব শক্তিধর মনে করতেন। তাই তাঁরা তাদের নামের সাথে যুক্ত করতেন বড় বড় উপাধি। যেমন- পরম সৌগত, পরম ভট্টারক, পরমেশ্বর মহারাজাধিরাজ ইত্যাদি। তাঁদের রাজধানী ছিল দেবপর্বতে। কুমিল-র নিকটা ময়নামতির কাছে ছিল এ দেবপর্বত। দেবদের রাজত্ব বিস্তৃত ছিল সমগ্র সমতট অঞ্চলে। আনুমানিক ৭৪০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৮০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দেব রাজারা শাসন করেন।

 

কান্তিদেবের রাজ্য :

দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার হরিকেল জনপদে নবম শতকে একটি স্বাধীন রাজ্যের উদ্ভব ঘটে। এ রাজ্যের রাজা ছিলেন কান্তিদেব। দেব রাজবংশের সঙ্গে কান্তিদেবের কোনো সম্পর্ক ছিল কি-না তা জানা যায় না। তাঁর পিতা ছিলেন ধনদত্ত ও পিতামহ ভদ্রদত্ত। বর্তমান সিলেট কান্তিদেবের রাজ্যভুক্ত ছিল। তাঁর রাজধানীর নাম ছিল বর্ধমানপুর। বর্তমানে এ নামে কোনো অঞ্চলের অস্তিত্ব নেই। এ সময়ে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় চন্দ্র বংশ বলে পরিচিত নতুন এক শক্তির উদয় হয়। কান্তিদেবের গড়া রাজ্যের পতন হয় এ চন্দ্র বংশের হাতে।

প্রাচীন বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস (খ্রিঃপূর্ব ৩২৬-১২০৪ খ্রিঃ):প্রথম অংশ

প্রাচীন বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস (খ্রিঃপূর্ব ৩২৬-১২০৪ খ্রিঃ)

পাল রাজাদের শাসনকাল থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। এর আগের ইতিহাস খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। এ সময়কালে কোনো শাসক দীর্ঘদিন সমগ্র বাংলা জুড়ে শাসন করতে পারেননি। তাই বিচ্ছিন্নভাবেই বাংলার রাজনৈতিক জীবনের বিকাশ ঘটেছে। মৌর্য ও গুপ্ত শাসনের অবসানের পর এক অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হয়। এরই মধ্য দিয়ে উত্থান ঘটে কিছু স্বাধীন রাজ্যের। স্বাধীন রাজ্য উত্থানের যুগে উত্তর বাংলার রাজা শশাংক ছিলেন সবচেয়ে শক্তিমান। তাঁর মৃত্যুর পর দীর্ঘকাল বাংলায় কোন যোগ্য শাসক ছিলেন না। ফলে রাজ্য জুড়ে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। প্রায় একশত বছর এ অবস্থার মধ্যে কাটে। অতঃপর গোপাল নামে এক নেতা এ অরাজক অবস্থার অবসান ঘটান এবং পাল বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। বারো শতকের মাঝামাঝি পাল বংশের পতন ঘটে। পাল শাসন যুগেই দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজ্য গড়ে উঠে। এরপর দক্ষিণ ভারতের কর্ণাট থেকে আগত সেন বংশ পূর্ব বাংলায় রাজ্য স্থাপন করে। প্রায় দুইশত বছর সেন শাসন অব্যাহত ছিল। তের শতকের প্রথম দশকে মুসলমান শক্তির হাতে সেন রাজত্বের অবসান ঘটে। শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়- বাংলার মধ্যযুগ।

প্রাচীন বাংলার গুরুত্বপূর্ণ রাজবংশ ও শাসন-ব্যবস্থা

মৌর্য ও গুপ্ত যুগে বাংলা

গুপ্ত যুগের পূর্বে প্রাচীন বাংলার ধারাবাহিক ইতিহাস রচনা করার তেমন কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি। কেননা তখনকার মানুষ আজকের মতো ইতিহাস লেখায় অভ্যস্ত ছিল না। ভারতীয় এবং বিদেশি সাহিত্যে এ সময়কার বাংলা সম্পর্কে ইতস্তত ও বিক্ষিপ্ত উক্তি হতে আমরা ইতিহাসের অল্পস্বল্প উপাদান পাই। এ সকল বিচ্ছিন্ন ঘটনা জোড়াতালি দিয়ে সন-তারিখ ও প্রকৃত ঘটনা সম্বলিত ধারাবাহিক কোনো ইতিহাস রচনা করা সম্ভব নয়। বস্তুত, খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৭- ২৬ অব্দে গ্রীক বীর আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময় হতে প্রকৃত ইতিহাসের রূপ পরিগ্রহ করে। গ্রীক লেখকদের কথায় তখন বাংলাদেশে ‘গঙ্গারিডই’ নামে এক শক্তিশালী রাজ্য ছিল। গঙ্গা নদীর যে দুটি স্রোত এখন ভাগীরথী ও পদ্মা বলে পরিচিত-এ উভয়ের মধ্যবর্তী অঞ্চলই ‘গঙ্গারিডই’ জাতির বাসস্থান ছিল। গ্রীক গ্রন্থকারগণ গঙ্গারিডই ছাড়াও ‘প্রাসিঅয়’ নামে অপর এক জাতির উলে- করেছেন। তাদের রাজধানীর নাম ছিল পালিবোথরাখ (পাটলিপুত্র)। গ্রীক লেখকদের বর্ণনার উপর নির্ভর করে অনুমান করা যেতে পারে যে এ দু জাতি একই রাজবংশের নেতৃত্বে একসঙ্গে আলেকজান্ডারের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছিল। এও অনুমান করা যেতে পারে, আলেকজান্ডারের আক্রমণের সময় বাংলার রাজা মগধাদি দেশ জয় করে পাঞ্জাব পর্যন্ত স্বীয় রাজ্য বিস্তার করেছিলেন। তিনি ছিলেন পাটলিপুত্রের নন্দবংশীয় কোনো রাজা। এ সময় যে বাংলার রাজাই সমধিক শক্তিশালী ছিলেন প্রাচীন গ্রীক লেখকগণের উক্তি থেকে তা নি:সন্দেহে প্রমাণিত হয়।

প্রাচীন বাংলার জনপদ

প্রাচীন বাংলার জনপদ

ইতিহাস বিষয়ক আলোচনায় যুগের বিভাজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব, বিকাশ ও প্রভাবের কার্যকারিতা নিয়েই এ যুগ বিভাজন নির্ণয় করা হয়ে থাকে। সাধারণত ইতিহাসে খ্রিষ্টপূর্ব কয়েক শতক পূর্বের সময় থেকে খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতকেই প্রাচীনকাল বা যুগ বলে ধরা হয়ে থাকে। তবে অঞ্চল ভেদে কালবিভাজনের তারতম্যও লক্ষ্য করা যায়। খ্রিষ্টীয় তেরো শতকের পূর্ব পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় দু’ হাজার বছরের সময়কে বাংলার প্রাচীন যুগ বলে ধরা হয়ে থাকে।